‘আপনাদের এখানে কি পুরুষ যৌনকর্মী আছে?’
মেয়েটির বয়স আর কত হবে? তেরো কী চৌদ্দ! সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। মেয়েটি কথা বলতে পারে না, কোনো কিছু ধরতেও পারে না। তার জন্য একা একা চলাফেরা করা, জামা-কাপড় পরা, খাওয়া-দাওয়া করা কঠিন। এর মধ্যেই তার মা তাকে ছেড়ে চলে যায়; তার চাচা, চাচি এবং চাচাতো বোনও চলে যায়। শুধু বাবাটার কোথাও যাওয়া হয় না; যেতে পারেন না। মেয়ের কাছেই রয়ে যান।
মেয়েটির দেখভাল বাবা একাই করতে থাকেন। খাইয়ে দেওয়া, গোসল করানো হাতে নেইল পলিশও লাগিয়ে দেন বাবা। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় মেয়ের পিরিয়ডের সময়। কে পরিয়ে দেবে প্যাড? বাবা তো আর মেয়েকে প্যাড পরাতে পারেন না। তিনি ভাবেন, এখন যদি তার স্ত্রী থাকত, তাহলে মেয়ের খেয়াল রাখতে পারত। বাবা গিয়ে এক নার্স নিয়ে আসেন। কিন্তু সমাজের চাপে সেই নার্সও কাজ করতে পারেন না এই বাড়িতে।
সমাজ বাবা-মেয়েকে প্রতিনিয়ত প্রত্যাখ্যান করলেও বাবা মেয়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়েই যান। গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে যেতে হয়; হোটেল, বাসা, রিহ্যাব সব মিলিয়ে মেয়ের জন্য বাবার নিরন্তর সংগ্রামের গল্প এটি। সিনেমাটির নাম ‘পেরানবু’। মানসিক ও শারীরিকভাবে অসহায় দুজন মানুষের গল্প। বাবা-মেয়ের গল্প।
আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী মানুষেরও যে প্রেম ও যৌন আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, সেটা সবসময় স্বীকার করা হয় না। কিন্তু তামিল ভাষার পেরানবুতে সেটাই দেখানো হয়েছে। টিভিতে একটি চুমু খাওয়ার দৃশ্য দেখে মেয়েটিও চুমু খেতে যায়। বাবার এ দৃশ্য দেখে খুব কষ্ট হয়। সে ভাবে, কোনো বাচ্চাই যেন আর এ রকম না হয়। কোনো বাবাই যেন এ রকম পরিস্থিতিতে না পড়ে।
বাবা তার সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত মেয়ের জন্য পুরুষ যৌনকর্মী খুঁজতে যান। পতিতালয়ে গিয়ে বলেন, আপনাদের এখানে কি পুরুষ যৌনকর্মী আছে? পতিতালয়ের মেয়েটি জানতে চান, আপনি কি সমকামী? বাবা বলেন, না। আমি আমার মেয়ের জন্য চাই। তখন সেই মেয়েটি তাকে একটা কষে চড় মারেন।
বাবা-মেয়ে সম্পর্ক নিয়ে অনেক সিনেমাই আছে। কিন্তু এটিই প্রথম কোনো সিনেমা, যেখানে প্রতিবন্ধী মেয়ের যৌনতা পূরণে এগিয়ে এসেছে বাবা। আসলে যাদের পরিবারে প্রতিবন্ধী কেউ নেই, তারা কখনোই এসব সমস্যা বুঝবে না। তাদের কষ্টগুলো অনুভব করতে পারবে না।
পেরানবু অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে রয়েছে। চমৎকার গল্পের পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকার দৃশ্য, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, গান সব কিছুই ভালো লাগবে।
(দেশ রূপান্তর । ০১ জানুয়ারি ২০২৪)
মন্তব্যসমূহ