পরকীয়া, ষড়যন্ত্র আর এক স্বামীর নিঃশব্দ মৃত্যু

সন্ধ্যা নামছে রাঙামাটির পশ্চিম কোদালা গ্রামে। সবুজ পাহাড় আর নির্মল হাওয়ার আড়ালে যে গল্প লুকিয়ে আছে, তা শুনলে শরীর কেঁপে ওঠে। দিদার আলম হয়তো সেদিনও প্রতিদিনের মতো বাজার থেকে ফিরে এসেছিলেন। হাতে বাজারের থলে, মুখে ক্লান্তির ছাপ, মনে ছিল সংসারের হিসাব। কিন্তু তিনি জানতেন না, সেই বাজারটাই তার জীবনের শেষ বাজার। জানতেন না, যাকে নিজের জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ ভাবতেন— সেই স্ত্রী কোহিনুরের হাতেই লেখা আছে তার মৃত্যুর পরিণতি।

খাবারের সঙ্গে চারটি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ান কোহিনুর। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দিদার জানতেন না, এ ঘুম আর ভাঙবে না কোনোদিন। এরপর স্ত্রীর নির্মমতা— বুকের ওপর চেপে বসে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা। যে হাত প্রতিদিন সংসার সামলাত, সেই হাতেই ঘটল প্রাণনাশের ভয়ংকর ঘটনা। তারপর শুরু হলো লাশ গুমের প্রস্তুতি। ধান শুকানোর প্লাস্টিকের চাটাইয়ে মুড়িয়ে দুই সহযোগীর সহায়তায় দিদারের নিথর দেহ ফেলে দেওয়া হলো পাশের খালে। সেদিন প্রকৃতিও যেন কেঁদেছিল, অঝোরে বৃষ্টি নামায় পানির তীব্র স্রোতে দিদারের লাশ ভেসে যায় দূর-বহুদূর।

কেন এই ভয়ংকর কাজ? কারণ, স্ত্রী কোহিনুর একসঙ্গে দুইজনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। স্বামী এক সম্পর্কের খবর পেয়ে যান, আর তাতেই শুরু হয় কলহ। সেই কলহ রূপ নেয় ঘৃণায়, আর ঘৃণা জন্ম দেয় ষড়যন্ত্রের। প্রেমিকের পরামর্শে— এমনকি তার দেওয়া ঘুমের ওষুধ খাইয়ে— নিজের স্বামীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি কোহিনুর।

আজ চার মাস হতে চলল, হতভাগা দিদার আলমের লাশ পাওয়া যায়নি। অথচ, তার স্ত্রী কোহিনুর সকল নৃশংসতা চাপা দিয়ে দিব্যি পরকীয়া প্রেমিককে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। ভাবা যায়, কতটা নির্মম হতে পারে মানুষের মন? ক্ষণিকের লালসা আর ভুল সম্পর্কের মোহে পড়ে একজন মানুষ এমন ঘৃণ্য অপরাধ করে কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে?

পরকীয়া শুধু সম্পর্ক ভাঙে না, অনেক সময় মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে দেয়। মনুষ্যত্ব, লজ্জা, মায়া— সবকিছু হারিয়ে যায় অন্ধ আবেগের গভীরে। এই ঘটনা আমাদের সমাজের সামনে এক কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়— ভালোবাসা, বিশ্বাস আর পারিবারিক বন্ধনের মূল্য কি এখন এতটাই তুচ্ছ? পরকীয়ার বিষাক্ত ছোবলে মানবিকতা আসলে আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

(যুগান্তর । ১৬ অক্টোবর ২০২৫)

মন্তব্যসমূহ