লোভ, ক্ষমতা ও ভালোবাসার গল্প—‘রঙিলা কিতাব’
নদীর তীরে মাথাবিহীন একটি লাশ পাওয়া যায়। যা নিয়ে পুরো এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। পরে একটি দোকানের পাশে ব্যাগের ভেতর থেকে মাথাটিও পাওয়া যায়। জানা যায়, মৃত ব্যক্তি এলাকারই ক্ষমতাসীন এমপি। লাশের পাশে পাওয়া মোবাইল ফোনটির সূত্র ধরে সন্দেহভাজন হিসেবে খোঁজা শুরু হয় প্রদীপকে। সঙ্গে খোঁজা হয় তার স্ত্রী সুপ্তিকেও।
‘রঙিলা কিতাব’ সিরিজটি এমনই রহস্যঘেরা এক প্রেক্ষাপটে শুরু হয়। কিন্তু এই সিরিজ দেখতে বসলে মনে হবে, এটি কেবল ক্ষমতা, প্রতিশোধ ও এক অন্তহীন সংঘর্ষের গল্প নয় বরং এর ভেতরে রয়েছে গভীর এক প্রেমের কাহিনী। কখনো মনে হবে এটি প্রতারণা ও প্রতিশোধের গল্প। আবার কখনো মনে হবে এটি মাতৃত্বের মায়া ও রাজনৈতিক জটিলতার ভেতরে গড়ে উঠা টানটান উত্তেজনাময় এক থ্রিলার।
গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রদীপ ও সুপ্তির সুখের সংসার। মফস্বলের সাধারণ জীবনে তাদের সুখ যেন চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নতুন জীবন শুরুর আগেই এক মিথ্যা অভিযোগে তাদের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। গর্ভবতী সুপ্তি প্রিয় স্বামীর সাথে পালিয়ে জীবন বাঁচাতে ছুটতে থাকে। এই গল্পে মাতৃত্বের মায়া, প্রেমের গভীরতা এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষের এক অনবদ্য মিশেল রয়েছে, যা দর্শকদের শেষ দৃশ্য পর্যন্ত আটকে রাখবে।
কিঙ্কর আহসানের উপন্যাস ‘রঙিলা কিতাব’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সিরিজটি নির্মাণ করেছেন পরিচালক অনম বিশ্বাস। প্রদীপ ও সুপ্তির চরিত্রে প্রাণবন্ত অভিনয় করেছেন মোস্তাফিজ নুর ইমরান ও পরীমণি। তাদের চরিত্রায়ণ এতটাই শক্তিশালী যে দর্শক চরিত্রগুলোর জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি অনুভব করতে পারবে।
প্রদীপের চরিত্রে মোস্তাফিজ নূর ইমরান শুরু থেকেই সাবলীল। প্রেমিক থেকে প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে ওঠার জটিলতায় তার অভিব্যক্তি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। নওরোজ চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু বরাবরের মতো দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। মনোজ প্রামাণিক ও ইরেশ যাকেরের অভিনয়ও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। ছোট চরিত্রে তানভীন সুইটির অভিনয় নজর কাড়ে।
তবে কিছু দৃশ্যে অতিরিক্ত গুলি ও খুনের প্রবণতা গল্পের মূল নির্যাসকে কিছুটা ব্যাহত করেছে। মফস্বলের প্রেক্ষাপটে এত সহজে খুনের ঘটনা যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। তবুও, 'রঙিলা কিতাব' মাতৃত্ব, প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বের এক অসাধারণ প্রতিচ্ছবি।
(কালের কণ্ঠ । ১১ নভেম্বর ২০২৪)
মন্তব্যসমূহ