ফেসবুকে বেহায়াপনার দৌড়ঝাঁপ, লাগাম টানবে কে?


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আজ আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। এখানে মানুষ খুব সহজেই নিজের কথা বলতে পারে, ছবি দিতে পারে, অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারে। নিঃসন্দেহে এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার এক বিশাল প্ল্যাটফর্ম। তবে সেই স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বও রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, দিন দিন এই প্ল্যাটফর্মে এক ধরনের বেহায়াপনার প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে, যা এখন সমাজের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আজকের বাস্তবতায় দেখা যায়, কেউ খোলামেলা ছবি পোস্ট করে অশালীন ক্যাপশন দিচ্ছে, কেউ আবার ব্যক্তিগত সম্পর্ককে জনসমক্ষে এনে আলোচনার খোরাক বানাচ্ছে। অনেকে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে বিতর্কিত ছবি বা ভিডিও দিয়ে ফলোয়ার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে শরীর দেখানো ছবি, সম্পর্কের ইঙ্গিতবাহী ক্যাপশন কিংবা পরোক্ষ অশ্লীল ইঙ্গিত—এসব এখন নিয়মিত দৃশ্য। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেন ধীরে ধীরে কৃত্রিম মনোযোগ পাওয়ার বাজারে পরিণত হয়েছে।

এভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে গিয়ে অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা পোস্ট করা হয় তা আর শুধু ব্যক্তিগত থাকে না। প্রতিটি ছবি, প্রতিটি ভিডিও বা প্রতিটি লেখা আমাদের পরিবার, সহকর্মী, এমনকি সমাজের সামগ্রিক নৈতিকতার ওপর প্রভাব ফেলে। অল্প কিছু লাইক বা কমেন্টের জন্য যদি কেউ নিজের সম্মান, শালীনতা ও ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দেয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে এর ফল ভয়াবহ হতে পারে।

এই প্রবণতা শুধু ব্যক্তিগত মর্যাদাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং সমাজের নৈতিক কাঠামোকেও ভেঙে দিচ্ছে। ছোটরা বা কিশোররা যখন এসব দেখে, তখন তারা বিভ্রান্ত হয়। তারা ভাবে, লাইক, রিয়্যাকশন বা ফলোয়ার পাওয়াটাই যেন জীবনের মূল সাফল্য। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

প্রযুক্তি আমাদের হাতের মুঠোয় পৃথিবী এনে দিয়েছে। এর ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে। কিন্তু আমরা কোন দিকটা বেছে নেব, সেটি নির্ভর করে আমাদের সচেতনতার ওপর। দায়িত্বশীল ব্যবহারই পারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ইতিবাচক ও অর্থবহ করে তুলতে। বিনোদনের নামে অশালীনতা দেখিয়ে ক্ষণিকের জনপ্রিয়তা পাওয়া গেলেও, তা ব্যক্তিত্বকে খাটো করে এবং সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এখনই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সংযম ও সচেতনতা আনার। প্রতিটি পোস্টের আগে অন্তত একবার ভাবা দরকার—এটি কি আমার ব্যক্তিত্বকে সম্মানিত করছে, নাকি আমাকে ছোট করছে? এটি কি পরিবার ও সমাজের কাছে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে, নাকি উল্টো নৈতিকতা ভাঙছে?

শালীনতা বজায় রেখে, ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে যদি আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করি, তবে সেটি আমাদের জীবনের সৌন্দর্য বাড়াবে, সম্মান বাড়াবে। কিন্তু লাগামহীন ব্যবহার কেবল ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

(যুগান্তর । ২১ আগস্ট ২০২৫)

মন্তব্যসমূহ