অটোরিকশা—আমাদের শহরের অদৃশ্য আতঙ্ক
‘চার্জে দেওয়া অটোরিকশা থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-মেয়ের মৃত্যু’—আজ এই খবরটি পড়ার পর অনেকক্ষণ ভাবলাম। দেশে এখন কত অটোরিকশা চলাচল করছে? নিশ্চিতভাবেই লাখ লাখ। আর প্রতিটিকেই প্রতিদিন চার্জে বসাতে হয়। সেই চার্জের তার, সংযোগ, অরক্ষিত বিদ্যুত—সবকিছু মিলেই যেন প্রতিদিন নতুন বিপদ ডেকে আনে।
এই যে— চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিদ্যুতায়িত মাকে বাঁচাতে গিয়ে মেয়েও মারা গেলেন। এর দায় কার? মালিকের? চালকের? নাকি আমাদের গোটা সিস্টেমের? বিদ্যুত তো আর বোঝে না নিরাপত্তা কী, নিয়ম মানা হলো কি হলো না। সে শুধু আঘাত করে।
পরশুর ঘটনা। মাটিকাটা এমপি চেকপোস্টের জ্যামে বাইকে বসেছিলাম। হঠাৎই পাশ দিয়ে ঢুকে পড়ে একটি অটোরিকশা। ঢুকেই আমার পায়ের উপর তুলে দেয় চাকা। মুহূর্তেই ব্যথায় কুঁকড়ে উঠি। দাঁত চেপে কোনোভাবে সামলে কিছু দূর গিয়ে জুতা খুলে দেখি—একটি আঙুলের দশা ভয়াবহ। তখনই মনে হলো, আমরা প্রতিদিন আসলে কী ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলি।
সেদিন চালকের মুখের দিকে তাকিয়ে বলি, ‘এটা কী করলেন?’ তিনি নির্বাক চোখে তাকিয়ে শুধু বলেন, ‘অনেক জোরে ব্রেক করেছি, কিন্তু থামেনি।’ এই হলো আমাদের অটোরিকশার অবস্থা। ব্রেক নেই, নিরাপত্তা নেই—তবুও চলছে দিব্যি।
অথচ একসময় আমি নিজেই এই চালকদের পক্ষে লিখেছি। ভেবেছিলাম, তারা তো দিন আনে দিন খায়, জীবিকার প্রয়োজনে গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—অযোগ্য ড্রাইভার আর অযোগ্য গাড়ি মিলে আজ রাস্তাঘাটকে পরিণত করেছে ভয়ংকর অরাজকতায়।
আমাদের একবার ভেবে দেখতে হবে—এ দায় আসলে কার? মালিকেরা শুধু আয়ের কথা ভাববেন, চালকেরা শুধু যাত্রী তুলতে জানবেন, আর কর্তৃপক্ষ চোখ বন্ধ করে রাখবেন! তাহলে প্রতিদিনই হয়তো নতুন নতুন মা, মেয়ে বাবা কিংবা সন্তান বিদ্যুতায়িত হবে, চাকার নিচে পড়বে কিংবা রাস্তার কোনো মোড়ে নিথর হয়ে যাবে।
আবেগ দিয়ে নয়, বাস্তবতার চোখে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। নইলে অটোরিকশা আমাদের শহরের এক অদৃশ্য আতঙ্কে পরিণত হবে।
(যুগান্তর । ২৭ আগস্ট ২০২৫)
মন্তব্যসমূহ