স্কেটিংয়ের উন্মাদনা— মজা থেকে বিপদের পথে
ঢাকার ব্যস্ত জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে স্কেটিং। শিশুরা যেমন শিখছে, তেমনি কিশোর-তরুণদের মাঝেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে দ্রুত। ফাঁকা পার্ক কিংবা নিরাপদ জায়গায় স্কেটিং নিঃসন্দেহে একটি স্বাস্থ্যকর বিনোদন ও শরীরচর্চা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর ব্যবহার যেভাবে বিপজ্জনক রূপ নিচ্ছে, তা উদ্বেগজনক।
বর্তমানে দেশে প্রতিবছর স্কুলভিত্তিক স্কেটিং প্রতিযোগিতা, জাতীয় স্কেটিং প্রতিযোগিতা, আন্তক্লাব স্কেটিংসহ নানা ধরনের আয়োজন হয়। দেশের বাইরে নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ স্কেটিং দল। এই খেলাগুলোতে অংশ নিতে সাধারণত স্কেটিং জুতা, সেভ গার্ড, হাতের কনুই ও হাঁটুর সুরক্ষার জন্য বিশেষ সেফটি গার্ড, হেলমেট, হাতের গ্লাভস, জার্সি ও শর্টস ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকেই এসবের তোয়াক্কা না করে ব্যস্ত রাস্তায় নেমে আসছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিও দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। কখনো তারা ফুটপাত ছেড়ে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ছে, কখনো আবার দৌড়ে বেড়াচ্ছে ব্যস্ত সড়কে। শুধু তাই নয়, ভারী যানবাহনের পেছনে ঝুলে থাকা কিংবা চলন্ত ট্রাকের নিচে ঢুকে নানা স্টান্ট নেওয়ার মতো বিপজ্জনক কাজও করছে কিশোরেরা। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন কিশোর স্কেটিং করতে করতে ট্রাকের নিচে ঢুকে পড়ে সেখানে স্টান্ট করছে। এই দৃশ্য নেটিজেনদের স্তম্ভিত করেছে, অনেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন।
অভিভাবক, সচেতন মানুষ এমনকি সাধারণ পথচারীরাও এমন আচরণে আতঙ্কিত। সামাজিক মাধ্যমে অসংখ্য মন্তব্য ঘুরছে—'ড্রাইভার যদি হঠাৎ ব্রেক করে বসেন, তাহলে যে কোনো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।' অনেকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন, 'এভাবে চলতে থাকলে নতুন প্রজন্ম বিপজ্জনক অভ্যাসে জড়িয়ে পড়বে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।'
স্কেটিংয়ের মতো একটি সুন্দর বিনোদনমূলক খেলা যখন বিপজ্জনক খেলায় রূপ নেয়, তখন সেটি শুধু সংশ্লিষ্ট শিশুদের জন্য নয়, অন্য সবার জন্যও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাজধানীর ব্যস্ত রাস্তায় যেখানে প্রতিদিন হাজারো গাড়ি ছুটে চলে, সেখানে এ ধরনের স্টান্ট কেবল বেপরোয়া নয়, আত্মঘাতীও বটে।
বিনোদনের জায়গা যেমন নিরাপদ মাঠ, পার্ক কিংবা নির্দিষ্ট ট্র্যাক, তেমনি স্কেটিংয়েরও প্রয়োজন নিরাপদ প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ। শিশুরা যে স্বপ্ন নিয়ে রোলার স্কেট পরে দৌড়ায়, সেটি যাতে আনন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং বিপদের কারণ না হয়, তার দায়িত্ব নিতে হবে পরিবার, সমাজ এবং প্রশাসন—সবারই।
ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় স্কেটিংয়ের নামে এ ধরনের দুঃসাহসী স্টান্ট থামানো এখন জরুরি। নইলে অল্প বয়সে উচ্ছ্বাসের খেসারত হতে পারে অনেক বড় দুর্ঘটনা, যার দায় এড়ানো কারো পক্ষে সম্ভব হবে না।
(কালের কণ্ঠ । ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
মন্তব্যসমূহ