মাত্র একটি ভোটের জন্য
একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী থাকেন আমেরিকায়। শুধু নিজের ভোটটা দিতে এসেছেন দেশে। ভোট দিয়েই আবার চলে যাবেন। নিজের বিমান থেকে নেমে সোজা যান ভোটকেন্দ্রে। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তিনি দেখেন কে যেন আগেই তার ভোটটা দিয়ে দিয়েছে!
মুহূর্তেই খবরটি জানাজানি হয়ে যায়। টিভিতে ব্রেকিং হয়— বিদেশ থেকে ভোট দিতে এসেছেন। কিন্তু এসে দেখলেন ওনার ভোট আগেই অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন। তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে?
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তার অধিকার আছে ভোট দেওয়ার। তেমনই ভোট না দিতে পারার কারণে তার অধিকার আছে এটার বিরুদ্ধে মামলা করার। তিনি অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন মামলা করবেন। আমেরিকা যাওয়া বাতিল করে সোজা চলে যান নির্বাচন কমিশনে।
লোকজন তাকে বলেন, ভাই, মাত্র একটা ভোটই তো। এ জন্য এত হাউকাউ করার কী আছে? কিন্তু তিনি অনড়। তিনি বলেন, এই একটা মাত্র ভোটের জন্যই কত নির্বাচনের প্লট পাল্টে গেছে। একটা ভোটও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর পর তিনি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।
সিনিয়র একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, আপনার মতে একটি ভোটের জোর কত? তিনি বলেন, আমি ভোট দিলে সরকার তৈরি হয়, আমি যদি ভোট না দিই, তাহলে এই সরকার তৈরি হবে কীভাবে বলুন তো? সাংবাদিক বলেন, কিন্তু একটা ভোটের জন্য কোনো দিন তো কিছু হয়নি। নির্বাচনের সময় এমন তো হয়েই থাকে। তারপরও তো সরকার গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, ঠিকই তো।
এ সময় আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি কি তাহলে যারা নকল ভোট দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন? ব্যবসায়ী সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সত্যি কথা বলতে কি, আপনি ঠিক বলেছেন, আমি যদি আমার ভোটের জন্য না লড়ি তাহলে আমার জন্য কে লড়বে? আমি যদি আমার জন্য লড়তে পারি, তাহলে বাকি লোকজন নিজের অধিকারের জন্য কেন লড়তে পারবেন না? নিজের অধিকারের জন্য প্রত্যেকটা মানুষের লড়া উচিত।
এর পরই শুরু হয় আসল খেলা, যখন তার দেখাদেখি আরও হাজারও মানুষ অনুপ্রাণিত হয়ে আদালতে আবেদন করে নিজের ভোট দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা জানান! তিনি তখন বুঝতে পারেন, রাজনীতির পচন অনেক দূর গড়িয়েছে!
একবার এক জনসমাবেশে একজন প্রশ্ন করেন, আমরা কেউই আমাদের ভোট দেওয়ার জন্য যাই না। জানি যে, ওটা জাল ভোট হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি একটা ভোটের জন্য এত কিছু কেন করছেন? উত্তরে তিনি বলেন, আপনারা আসল কারণটা জানতে চান? সবাই বলেন, জানতে চাই, জানতে চাই।
তিনি তার ছোট্ট গ্রামে বেড়ে ওঠার কথা, সেখানকার মানুষের ভোট না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের নির্বাচিত ব্যক্তিরা পাঁচ বছরের জন্য শক্তিশালী হলেও আমরা প্রত্যেকটা মানুষ একদিনের জন্য শক্তিশালী। আমি যে দেশেই থাকি না কেন, যেখানেই থাকি না কেন আমি ফিরে আসি নির্বাচনের দিন।
এটি একটি সিনেমার গল্প। একজন মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার সংগ্রামের গল্প। মূলত এই সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে দেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে। মানুষের ভোট প্রদানের ক্ষমতা নিয়ে। তাদের বাকস্বাধীনতা নিয়ে। তাদের শাসন-শোষণ থেকে কীভাবে বের হতে হবে তা নিয়ে।
হ্যাঁ! বলছিলাম দক্ষিণ ভারতের ‘সরকার’ সিনেমার কথা। তামিল ভাষার এই সিনেমাটি মানুষকে মনে করিয়ে দেবে তার অধিকারের কথা। মনে করিয়ে দেবে, তার একটি ভোটও পুরো সমাজব্যবস্থা বদলে দেওয়ার জন্য কতটা সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করতে পারে।
এই সিনেমায় নায়ক বিজয় যখন বলেন, বিরোধী দলকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেবেন, সেটা কিন্তু কাম্য নয়। বিরোধী দল না থাকলে দেশে কোনো গণতন্ত্র থাকতে পারে না।
তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না পরিচালক এ আর মুরুগাদোস কতখানি মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। হাতে সময় থাকলে দেখতে পারেন সিনেমাটি। একটার পর একটা রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত দেখতে দেখতে কখন যে সময় চলে যাবে আপনি বুঝতেই পারবেন না।
(দেশ রূপান্তর । ০৪ জানুয়ারি ২০২৪)
মন্তব্যসমূহ