ছাগলের গায়ে লেখা ‘আল্লাহু’, নাম শাহরুখ!
একজন পীরের কাছে ঝাড়ফুঁক নিতে আসে নানা পেশার মানুষ। পীর বৃদ্ধার মাথায় হাত রেখে ঝেড়ে দিচ্ছেন, ফুঁকে দিচ্ছেন, কেউ আবার পীরকে দেওয়া হাদিয়া বাক্সে রাখছেন। আর পীরের পাশেই শুয়ে আছে একটি ছাগল।
ছাগল? হ্যাঁ, এই ছাগলটির নাম ‘শাহরুখ’। কিন্তু সে যে শুধু একটি সাধারণ ছাগল নয়! যে পরিবারের লোকজন এক বেলার খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতেন, ক্ষুদ্রঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন কষ্টে থাকতেন এবং এনজিওর সামনে লাঞ্ছিত হতেন—সেই পরিবার এখন নতুন পোশাক পরতে পারছে, হাতে-গলায় স্বর্ণের অলংকার পরছে, দূর শহরে চা-কফিও খাচ্ছে। সব কিছু সম্ভব হয়েছে এই শাহরুখের কারণে।
কেন? কারণ শাহরুখের গায়ে লেখা ‘আল্লাহু’। এমন খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই মানুষ হুড়মুড়ে আসতে শুরু করে। বাড়ির মুরব্বি বিষয়টি কাজে লাগান। শাহরুখকে সামনে রেখে ময়ূরের পাখা হাতে নিয়ে উঠোনে বসে যান।
ফলাফল? থানা থেকে পুলিশ আসে, ডিসিও আসেন শাহরুখকে দেখতে। এলাকার এমপি প্রার্থী দোয়া নিয়ে আসেন, তার পার্টির লোকজন শাহরুখকে নিয়ে মিছিল করেন এবং তিনি এমপি হন।
কদর আরো বেড়ে যায়। ক্রিকেট টিমের সদস্যরা ঝাড়ফুঁক নিতে আসেন, সৌদি বাদশাহের পিএস ছুটে আসেন, এমনকি বাদশাহ নিজে আসতে চান এবং অর্ধকোটি টাকা দরদাম হাঁকা হয়। অগ্রিমও দেওয়া হয়।
এলাকার মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ বাড়তে থাকে। ব্যাংক ম্যানেজার ছুটে আসেন ডিপিএস করানোর জন্য, মসজিদ কমিটির লোকজন হাজির হন।
হঠাৎ আসে হিন্দু পুরোহিত, দাবি করেন ছাগলের বাবা ‘কালি’ ছিলেন, তাই অর্ধেক টাকা দিতে হবে। মুসলমানরা দাবি করেন, গায়ে লেখা ‘আল্লাহু’ তাদের, তাই তারা টাকা দিয়ে মসজিদ বানাবে। হিন্দুরা দাবি করেন, গায়ে ত্রিশূল আঁকা তাদের, তাই তারা মন্দির বানাবে। অবশেষে ডাকা হয় বিচার।
কিন্তু একদিন সেই পরিবারের লোকেরা ঋণের বোঝা কমাতে শাহরুখকে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। সে সময়ে বাড়ির আট বছরের ছোট ছেলে জুলফি এটি মানতে পারেনি। ছাগলটি তার খুব আদরের। একবার তো সে ছাগলটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
জুলফির বড় বোনের প্রেমিক ছেলে বুদ্ধি করে, রং দিয়ে শাহরুখের গায়ে ‘আল্লাহু’ লিখে দেয়। এরপর পুরো এলাকা ছাগলময় হয়ে ওঠে।
এটি একটি সিনেমার গল্প। হ্যাঁ, সোশ্যাল স্যাটায়ার সিনেমা। সিনেমাটি হাস্যরস ও স্যাটায়ারের মাধ্যমে সমাজে ঘটে যাওয়া বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলে। কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস, এবং ধর্মকে পুঁজি করে মানুষ কিভাবে ধান্ধা করে—সেটিই এটি আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।
২০১৪ সালে বলিউডে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং মাত্র ৪.০। আমার বিশ্বাসই হয় না কেন এত কম! তার পরও যদি দেখতে চান তাহলে ইউটিউবে ‘ইয়ে হ্যায় বাকরাপুর’ লিখলেই পেয়ে যাবেন।
(কালের কণ্ঠ । ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, দেশ রূপান্তর । ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ )
মন্তব্যসমূহ