ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি না কেন?


একজন বাবা, কাঁধে দুটি স্কুলব্যাগ, দুই হাতে ধরে আছেন তাঁর দুই সন্তানকে। ফুটওভার ব্রিজ মাথার ওপরে থাকলেও ব্যস্ত সড়কের নিচ দিয়েই হেঁটে পার হচ্ছেন তিনি। একজন মা, কোলে ছোট্ট শিশু, হাতে বড় দুটি ব্যাগ—তিনিও একইভাবে নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। আরেকজন যুবক, এক হাতে বাজারের ব্যাগ, অন্য হাতে মোবাইল ফোন—তিনিও অবলীলায় উপেক্ষা করছেন মাথার ওপর থাকা ফুটওভার ব্রিজ। এমন চিত্র প্রতিদিনের। শুধু ভারী বোঝা নিয়েই নয়, খালি হাতেও অনেকে দিদারসে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হন।

সড়কে দুর্ঘটনা এখন আর শুধু শোনা খবর নয়, প্রতিদিনের বাস্তবতা। শহরের বহু জায়গায় ফুটওভার ব্রিজের নিচে ডিভাইডার কিংবা লোহার গ্রিল দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়, যেন মানুষ বাধ্য হয় ব্রিজ ব্যবহার করতে। কিন্তু মানুষ কি সে বাধা মানে? ফাঁকফোকর দিয়ে ঠিকই পার হন তারা। শিশু, কিশোর, তরুণ, এমনকি বৃদ্ধরাও এই নিয়ম ভেঙে নিচ দিয়ে পার হন, যেন এটাই স্বাভাবিক।

অথচ এসব মানুষের মাথার ওপরে থাকে নিরাপদ পথ—ফুটওভার ব্রিজ। প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক, অটোরিকশা, বাইকের ভিড়ে তারা যে ভয়ংকর ঝুঁকি নিচ্ছেন, তা হয়তো তারা নিজেরাও পুরোপুরি অনুধাবন করেন না। কিংবা বুঝেও উপেক্ষা করেন। কারণ, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে একটু হাঁটতে হবে, কিছু সিঁড়ি ভাঙতে হবে—এটুকুই যেন বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি শিক্ষার্থীরাও, যারা নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রতীক, তারাও ঝুঁকি নিয়ে ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়েই যাতায়াত করে। 

তবে শুধু পথচারীদের দোষ দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলা যায় না। অনেক জায়গায় ফুটওভার ব্রিজের ওঠানামার জায়গা দখল করে বসে থাকেন হকাররা। কোথাও কোথাও আবার রয়েছে চুরি-ছিনতাইয়ের ভয়। ফলে মানুষ মনে করেন, নিচ দিয়ে যাওয়াই হয়তো নিরাপদ ও সহজ।

এই পরিস্থিতির পরিণতি ভয়াবহ। প্রতিদিন ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন অবাধ চলাচল রোধে প্রয়োজন সামগ্রিক উদ্যোগ। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের গুরুত্ব ও ট্রাফিক আইন মানার শিক্ষা শিশু বয়স থেকেই দিতে হবে। স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে ফুটওভার ব্রিজগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, দখলমুক্ত রাখতে হবে প্রবেশপথ।

আমরা অনেকেই মনে করি, একবার নিচ দিয়ে গেলে কী এমন হবে? কিন্তু এমন একবারই অনেক সময় হয়ে দাঁড়ায় শেষবার। মাথার ওপর যখন নিরাপদ পথ আছে, তখন ঝুঁকি নিয়ে নিচ দিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজেদের ও প্রিয়জনের জীবনের জন্য, চলুন সবাই মিলে একটু সচেতন হই। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি—নিরাপদে বাঁচি।

(কালের কণ্ঠ । ২৮ মে ২০২৫)

মন্তব্যসমূহ