অপেক্ষার শেষ, হৃদয়ের পূর্ণতা
তারেক রহমানের এই ছবিটি দেখার পর চোখ ভিজে উঠেছে। কেন এমন হলো? এই ছবিতে এমন কী আছে? শুধু চোখে ভেজেনি, বুকের ভেতরেও যেন এক অজানা কষ্টের ঢেউ উঠল। কেন এমন ধাক্কা লাগল হৃদয়ে? এই ছবির গভীরে কী এমন শক্তি লুকিয়ে আছে? আহারে মা! মা-ভক্তদের জন্য এমন একটি ছবি হৃদয়ের গভীরে দাগ কাটাই স্বাভাবিক। এক-দুই বছর নয়, দীর্ঘ সাড়ে সাত বছরের অপেক্ষা।
মায়ের স্নেহ, মায়ের স্পর্শ, মায়ের ঘ্রাণ থেকে এত দীর্ঘ সময় দূরে থাকা যে কী অসহ্য, তা বোঝানো যায় না। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান। লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে মায়ের ছোঁয়া পেলেন তারেক রহমান। মা-ছেলের এই আবেগঘন পুনর্মিলন যেন এক স্বর্গীয় মুহূর্ত—যা শব্দ দিয়ে বর্ণনা করা সত্যিই অসম্ভব।
চিকিৎসার প্রয়োজনে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বেগম খালেদা জিয়া যখন লন্ডনে পৌঁছান, তখন হুইলচেয়ারে বসা মাকে দেখে থমকে দাঁড়ান তারেক রহমান। পরক্ষণেই তিনি হাঁটু গেড়ে মাকে জড়িয়ে ধরেন। সেই মুহূর্ত যেন আবেগ, ভালোবাসা এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। চারপাশের সবাই নিঃশব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের চোখের কোণে জমা জল আবেগের গভীরতা প্রকাশ করছিল।
যে মায়ের ভালোবাসা সন্তানের জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয়, সেই মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা তারেক রহমানের চোখে-মুখে স্পষ্ট। তার পাশে ছিলেন তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। শাশুড়ির পা ছুঁয়ে সালাম করার সময় তার চোখেও আবেগের ঢেউ। দীর্ঘদিনের বিরহ আর কষ্ট যেন এই এক মুহূর্তেই মুছে গেল। এরপর আর এক মুহূর্ত দেরি না করে তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
যেন মাকে এক মুহূর্তের জন্যও দূরে রাখা যাবে না। এতদিনের জমে থাকা আবেগ, অনুভূতি আর ভালোবাসা মিলে সৃষ্টি করল এক হৃদয়ছোঁয়া মুহূর্ত। মা-ছেলের এই সফর হয়ে উঠল ভালোবাসা আর অনুভূতির এক মুগ্ধকর গল্প।
খালেদা জিয়ার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই সংগ্রামের গল্প। গণতন্ত্রের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কারাগারের অন্ধকার অধ্যায় পেরিয়েছেন, এমনকি সন্তানদের থেকেও বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে। তবুও কোনো বাধাই তার অটল মনোবলকে নত করতে পারেনি।
তারেক রহমানের জীবনের গল্পও কম করুণ নয়। মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু তাকে ভেঙে দিয়েছে। বাবার সমাধি, ভাইয়ের কবর—কিছুই ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পাননি। এই দূরত্বই তাকে শিখিয়েছে সংগ্রাম আর সহনশীলতা।
লন্ডনে মায়ের সঙ্গে দেখা করার পর এবার যেন নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তারেক রহমান। মাকে কাছে পেয়ে তার মন ভরে উঠেছে উচ্ছ্বাসে। তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, তার মা বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আবারও গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবেন। আর সেই সংগ্রামে মা-ছেলে একসঙ্গে থাকবেন, একসঙ্গে এগিয়ে যাবেন।
বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীর কাছেও এই পুনর্মিলন নতুন স্বপ্নের বার্তা নিয়ে এসেছে। তারা প্রত্যাশা করছেন, তারেক রহমানের সঙ্গে এক নতুন বাংলাদেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। মা-ছেলের এই ঐক্যই আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে দিতে পারে—এমনটাই তাদের বিশ্বাস। এই পুনর্মিলন যেন শক্তি, প্রেরণা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
(কালের কণ্ঠ । ০৮ জানুয়ারি ২০২৫)
মন্তব্যসমূহ