আত্মত্যাগ আর ভালোবাসার অসাধারণ আখ্যান-'মিথ্যে প্রেমের গল্প'
গ্রামের রান্না ঘর। মন খারাপ করা এক সরলা মেয়ের পাশে চুপচাপ গিয়ে বসে এক যুবক। মেয়েটি লাজুকভাবে ঘোমটা টেনে নেয়, অথচ রান্নার কাজ থেমে থাকে না। তরকারিতে মসলা দেয়ার ফাঁকে ছেলেটি এগিয়ে দেয় এক গ্লাস। বলে, 'এক গ্লাস পানি দেন দেনি।' মেয়েটি পানি দেয়। ছেলেটি বলে, 'আপনার মতো সুন্দরী মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি। কিন্তু যদি খুশি মনে দিতেন… খেয়ে মইরা গেলেও আফসোস থাকতো না।' মেয়েটি তখনো মন খারাপ করা গলায় প্রশ্ন করে, 'আসলেই আমি সুন্দর?' ছেলেটি দৃঢ়ভাবে বলে, 'আসলেই।'
এরপর এক অদ্ভুত খেলা শুরু হয়। মেয়েটি গ্লাসে পানি দেয়, ছেলেটি সেটা ফেলে দেয়। বারবার।
কিন্তু মেয়েটির মন ভালো না হওয়া পর্যন্ত সেই পানি মুখে তোলে না। তৃতীয়বার যখন মেয়েটি হাসিমুখে পানি দেয়, তখন সে পান করে। আর বলে, 'আমি কখনো আপনার মন খারাপ করতে দেব না।' মেয়েটি চোখ নামিয়ে বলে, 'সবাই এমনই বলে। পরে সবাই ভুইলা যায়।' ছেলেটি জবাব দেয়, 'সবাইরে আমার লগে মিলায়েন না। আমি ওয়াদা রাখা লোক।' - 'কি ওয়াদা?' - 'সবসময় আপনার মন ভালো রাখার ওয়াদা।'
এই এক গ্লাস পানিকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় তাদের গল্প, যার নাম—‘মিথ্যে প্রেমের গল্প’। তবে ‘মিথ্যে’ শব্দটির আড়ালে যে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে, তা অনেক সত্যিকারের প্রেমকেও হার মানায়। সদ্য মুক্তি পাওয়া এই নাটকটি দেখা যাচ্ছে ইউটিউব চ্যানেল ‘ক্যাপিটাল ড্রামা’-তে। বসুন্ধরা টিস্যু নিবেদিত ও মাহমুদুর রহমান হিমি পরিচালিত এই ঈদের বিশেষ নাটকের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে সাইফ ও আয়াত নামের দুই চরিত্রকে ঘিরে। চরিত্র দুটিতে অভিনয় করেছেন ফারহান আহমেদ জোভান ও নাজনীন নাহার নিহা।
সাইফ একজন সৎ, শান্ত ও নীতিবান মানুষ। আয়াতকে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে গিয়ে সে এমন একটি অপরাধের দায় নিজের কাঁধে নেয়, যা সে আদৌ করেনি। ক্ষমতাবান এক দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান যখন আয়াতকে ধর্ষণের চেষ্টা করে, তখন শুরু হয় নাটকের আসল কাহিনি।
দয়াল সাহার চিত্রনাট্যে ফুটে উঠেছে আত্মত্যাগ, দায়িত্ববোধ আর নিঃশব্দ ভালোবাসার নিখুঁত চিত্র। 'মিথ্যে প্রেমের গল্প' শুধু একটি প্রেম কাহিনি নয়, এটি একটি সময়, পরিস্থিতি ও হৃদয়ের গভীরতার গল্প। যেখানে ভালোবাসা মানে কেবল প্রেমের গাঢ়তা নয়, বরং সেখানে থাকে বিশ্বাস, আত্মত্যাগ আর এক গভীর মানবিক বোধ।
'মিথ্যে প্রেমের গল্প' সেইসব মানুষদের কথা বলে যারা ভালোবাসার জন্য নীরবে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেয়, অথচ তাদের গল্প প্রায়শই সমাজের কাছে অজানা থেকে যায়। নাটকটি বোঝাতে চায় যে, ভালোবাসা কেবল প্রেম আর ভালো লাগার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এতে বিশ্বাস, আত্মত্যাগ এবং কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার সাহসও প্রয়োজন।
জোভান ও নিহার অভিনয় ছিল সাবলীল এবং তাদের রসায়ন দর্শকদের মুগ্ধ করবে নিঃসন্দেহে। বিশেষ করে নিহার লাজুকতা এবং জোভানের সংবেদনশীলতা চরিত্র দুটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। ভালোবাসা, বিশ্বাস, আর ত্যাগের এমন মর্মস্পর্শী উপস্থাপনা সত্যিই বিরল। নাটকটি দেখার পর মনে হবে, ভালোবাসার আসল অর্থ কী, আর সত্যিকারের প্রেম কখনো মিথ্যে হয় না-শুধু তা বলার মানুষটা হয়তো হারিয়ে যায়।
(কালের কণ্ঠ । ২০ জুন, ২০২৫)
মন্তব্যসমূহ