পাহাড়ের বাঁকে হারানো ভালোবাসার হাহাকার—'অনেক দিন পরে'

 

বন্ধুতা, অপূর্ণ প্রেম আর অপরাধবোধ-এই তিনের মিশেলে এক তীব্র আবেগময় গল্প হয়ে উঠেছে 'অনেক দিন পরে'। রুবেল হাসানের চমৎকার নির্দেশনায় মুশফিক ফারহান ও কেয়া পায়েল যেন প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন এই পাহাড়ি গল্পে।

বিদেশ থেকে ফিরে বন্ধুর এনগেজমেন্টে যোগ দিতে গিয়ে আবির বুঝতে পারে, বিয়ের মঞ্চে যে মেয়েটিকে সে হাসতে দেখে, সেই তো তার অদিতি-যাকে বুকে লুকিয়ে বছরের পর বছর ভালোবেসে এসেছে। চোখের পলক পড়ে না, বুকটা টনটন করে ওঠে।

অথচ কিছুই তো করার নেই! বন্ধুর হাতে যখন অদিতির আঙুলে বাগদানের আংটি ওঠে, আবিরের নিঃশ্বাস যেন জমে যায় পাহাড়ের বাতাসে।

এরপর সেই নাটকীয় সন্ধ্যা। ডাকাতদের হাতে জিম্মি হয়ে যখন সবার প্রাণটা ওলটপালট, তখন আবির নিজের জীবন বাজি রেখে অদিতিকে রক্ষা করে। পাহাড়ি চা বাগানের আঁকাবাঁকা পথে দুজনের হারানো ভালোবাসা যেন আবারও ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়।

অদিতির প্রশ্ন, 'তুমি আমাকে এভাবে আগলে রাখো কেন?' আর আবিরের জবাব, 'তোমাকে ভালোবাসি, আগেও বাসতাম, এখনো বাসি।' দর্শকের বুকেও কাঁপন তোলে। রাতভর কান্না আর না বলা কথার দোলাচলে ভোর হয়। কিন্তু ফিরে আসার পর ভুল বোঝাবুঝি আর অপমানের ছোবল যেন সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে দেয়।

বন্ধুর সন্দেহে অদিতির ভেতরের যন্ত্রণা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। গল্পটা এখানেই থেমে থাকে না। বরং দর্শককে রেখে যায় হাজারো প্রশ্ন আর বেদনার ছোঁয়া-আবির কি পারবে অদিতিকে ফিরে পেতে? নাকি পাহাড়ের মতোই অনড় থেকে যাবে তার কষ্ট?

এই নাটকের সংলাপগুলোও দারুণ সৃষ্টিশীল ও সংবেদনশীল। 'আমার হৃদয়টা আপনাকে উপহার দিলাম', 'আমি চলে গেলে ছাদে গিয়ে সিগারেট খেতে বাধা নেই আপনার', 'একটু ধরে বসি না যদি পড়ে যাই'-এই সব সহজ অথচ তীব্র অনুভূতিপূর্ণ বাক্যগুলোই প্রমাণ করে, ভালোবাসা কখনো মরে না।

মুশফিক ফারহান ও কেয়া পায়েল দুজনেই অসাধারণ অভিনয় করেছেন। চোখের চাহনি আর সংলাপ ডেলিভারিতে মিশে আছে চরিত্রের প্রতিটি আবেগ। পাহাড়ি সৌন্দর্যের আবহে ক্যামেরার কাজও চোখজুড়ানো। 'অনেক দিন পরে' শুধু একটা প্রেমের গল্প নয়, এটা হারানো ভালোবাসা, না বলা কথার হাহাকার আর হৃদয়ভাঙা যন্ত্রণার এক অনবদ্য চিত্র। 

যারা প্রেমের ব্যথা আর না বলা কথার তীব্রতা অনুভব করতে চান, তাদের জন্য ‘অনেক দিন পরে’ নিঃসন্দেহে এক দারুণ উপহার। 

(কালের কণ্ঠ । ২১ জুলাই ২০২৫)

মন্তব্যসমূহ