ছেলেটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে বাক্সে ভরে ফেলল লোকটি!

 

দাঁড়িওয়ালা একটি লোক। দেখে একটু মাতাল টাইপের মনে হবে। ব্যালান্স কম। একবার টিভি দেখছেন। আরেকবার ডাইনিংয়ে গিয়ে খাবার নিয়ে আসছেন। একটু পরপর হাতে থাকা ঘড়ির টাইম দেখছেন। টাইম দেখে সোফার ওপরেই শুয়ে পড়ছেন। আবার কিছুক্ষণ পর উঠছেন। এবার উঠে দোতলার একটি রুমে যান। পায়চারি করেন। অ্যাপরন পরেন। বিছানার নিচে পরে থাকা অজ্ঞান এক ছেলেকে তুলে টেবিলের ওপরে শোয়ান। এরপর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে ছেলেটিকে কেটে টুকরো টুকরো করেন। তারপর একটি বাক্সে ভরে সেটি টেনে নিচে নিয়ে আসেন। এগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে একটি মেয়ে দেখছিল। সে তার বন্ধুকে উদ্ধারের জন্য এসেছে। দোতলার অন্য একটি রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে তার বন্ধুকে।

এটি একটি ইন্দোনেশিয়ান হরর-থ্রিলারের গল্প। সিনেমার নাম ‘মনস্টার’। পুরো সিনেমাটিতে শুধুমাত্র দুটি সংলাপ। ছেলেটি মেয়েটিকে একবার নাম ধরে ডাকে আর মেয়েটিও একবার ছেলেটিকে নাম ধরে ডাকে। ব্যস। আর কোনো সংলাপ নেই। সত্যি কথা বলতে কি, এর কোনো প্রয়োজনও নেই। কারণ সংলাপের শূন্যতা পূরণের জন্য সাসপেন্স, আতঙ্ক আর ভয়ংকর পরিবেশই যথেষ্ট। লোকটি যখন ছেলেটিকে কাটছিল, তার চোখ-মুখ দেখে তখন মনে হয়েছিল তিনি একটি কেক কাটছেন। রক্তের দৃশ্য তাকে কাতর বা দুর্বল করতে পারেনি, যা সত্যিই ভয়ংকর ছিল।

সিনেমাটির গল্প শুরু হয় দুজন বন্ধুকে ঘিরে। মেয়েটির বয়স কত হবে? বারো কি তেরো। আর ছেলেটির দশ কি বারো। দুজন ভালো বন্ধু। মেয়েটির সাইকেলের পেছনে বসে ছেলেটি স্কুলে যায়। ললিপপ খায়। ঘুরে বেড়ায়। গেমের দোকানে গিয়ে তারা গেম খেলে। একদিন গেমের দোকান থেকে খেলা শেষে মেয়েটি বের হয়ে দেখে ছেলেটি নেই। কোথায় গেল? দেখে, একটি প্রাইভেট কারের সামনে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছেন। মেয়েটি তার চেহারা দেখে ভয় পায়। লোকটি এগিয়ে এসে মেয়েটিকে জোর করে হাত-মুখ বেঁধে গাড়ির পেছনের ডেকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলে। সেখানে আগে থেকেই হাত-মুখ বাঁধা সেই ছেলেটিও ছিল। লোকটি তাদের একটি নির্জন বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর মেয়েটিকে ডেকের ভেতর রেখে লোকটি ছেলেটিকে নিয়ে দোতলার একটি রুমে নিয়ে আটকিয়ে রাখেন। মেয়েটি ডেকের ভেতর থেকে বের হয়ে হাত-পায়ের বাঁধন খুলে চলে যেতে চায়। কিন্তু তার বন্ধুর কথা ভেবে তাকে উদ্ধার করার জন্য নির্জন ওই বাড়ির ভেতরে যায়।

সিনেমাটিতে মাত্র চারটি প্রধান চরিত্র এলানা, রবিন, জ্যাক ও মুর্নি। মেয়েটির নাম এলানা আর ছেলেটি রবিন। যে লোকটি তাদের অপহরণ করেছে তার নাম জ্যাক। আরও আছে জ্যাকের স্ত্রী মুরনি। এলানার বয়স কম হলেও সে তার বন্ধু রবিনকে উদ্ধারের জন্য বুদ্ধি বের করে। জ্যাক যখন ফের সোফায় শুয়ে পড়েন তখন এলানা আস্তে আস্তে পাশের কর্নার টেবিলে রাখা চাবি আনতে যায়। কিন্তু জ্যাক এলানার হাত খপ করে ধরে ফেলেন। এলানা হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে ডাইনিংয়ের দিকে যায়। জ্যাকও সেদিকে যান। এলানা ডাইনিং রুমে রাখা একটি ছুরি বের করে জ্যাককে ভয় দেখায়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে জ্যাকের বুকের মধ্যে ছুরিটি ঢুকে যায়। মাতাল জ্যাক ফ্লোরে পড়ে যান। এলানা কাছে গিয়ে দেখে যে জ্যাক বেঁচে নেই। এমন সময় জ্যাকের বউ মুরনি আসেন বাসায়। এখন এলানা করবে কী? এক বিপদ থেকে উদ্ধারের পর আরেক বিপদ। বন্ধুকে উদ্ধার করবে কীভাবে?

নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে এতটুকুন মেয়ের সাহস আর বুদ্ধি সেই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছিল। কারণ পুলিশ সময়মতো পৌঁছেছিল। মেয়েটি তো গাড়ির ডেক থেকে বের হয়ে চলেই যেতে পারত। কিন্তু কেন যায়নি? সে তার বন্ধুকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে চেয়েছিল। বন্ধুর জন্য জীবন বাজি রাখে আসলে কতজন? তবে আপনি বুঝতে পারবেন না লোকটি ভয়ংকর এসব কাজ কেন করছেন? তিনি কি বাচ্চাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত? একটু ধোঁয়াশা রয়েই যাবে মনে।

‘মনস্টার’ সিনেমাটি আমেরিকান হরর-থ্রিলার ‘দ্য বয় বিহাইন্ড দ্য ডোর’-এর রিমেক হলেও ইন্দোনেশিয়ান পরিচালক রাকো প্রিজান্তো এটিতে কোনো সংলাপই রাখেননি। সিনেমাটি শুরুর আগেই দর্শককে সতর্ক করা হয়, ‘সিনেমাটিতে কোনো সংলাপ নেই’। যাতে মনে না হয় আপনার টিভিতে কোনো সমস্যা হয়েছে।

(দেশ রূপান্তর । ২৯ জুন ২০২৪)

মন্তব্যসমূহ