দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্ডারওয়্যার পরে রাস্তায় নেমেছিল শিশুরা


খালি গায়ে শুধু আন্ডারওয়্যার পরে রাস্তায় নেমেছে একদল শিশু। তাদের বয়স আর কত হবে? এই সাত কি আট! তাদের হাতে আবার ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড। রাস্তার আশপাশের মানুষজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। শিশুরা রাস্তার এক পাশ ধরে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে আরও শিশু। শহরের অলিগলি থেকে একজন, দুজন করে করে শত শত শিশু জড়ো হচ্ছে রাস্তায়। দূর-দূরান্ত থেকে রিকশায়, বাসে, সাইকেলে চড়েও আসছে শিশু। মুহূর্তেই হাজার হাজার শিশু জড়ো হয়ে যায় রাস্তায়। সবারই খালি গা, সঙ্গে শুধু আন্ডারওয়্যার। তারা শহর ঘুরে একটি পার্কে ঢুকে পড়ে। সাংবাদিকরা ছুটে আসেন। কেউ টিভিতে লাইভ করেন কেউ আবার সাক্ষাৎকার নেন। শহরের সবারই চোখ এখন ওই পার্কের দিকে আর টিভির পর্দায়। শিশুরা আসলে কী চায়!

দৃশ্যটি ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া পারিবারিক কমেডি সিনেমা ‘চিল্লার পার্টি’র। এটি বলিউড সুপারস্টার সালমান খানের প্রথম প্রযোজনা।

সিনেমাটি শুরু হয় একটি হাউজিং সোসাইটির আটজন শিশুকে নিয়ে। তাদের আবার প্রত্যেকের নিজস্ব গুণাবলির ওপর ভিত্তি করে ডাকনাম রয়েছে। জাংঘ্যা, এনসাইক্লোপিডিয়া, আকরাম, পানাউতি, লক্ষ্মণ, সেকেন্ড হ্যান্ড, সাইলেন্সার ও শাওলিন। তারা একসঙ্গে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়, একসঙ্গে সোসাইটির কম্পাউন্ডে ক্রিকেট খেলে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিপক্ষে তারা সব সময় হেরে যায়।

একসময় তাদের সোসাইটিতে গাড়ি ধোয়ার কাজ করার জন্য গ্রাম থেকে আসে এক শিশু। যার নাম ফটকা। সে তার পোষা কুকুর ভিদুকে সঙ্গে নিয়ে আসে। সোসাইটির একটি পুরাতন গাড়িতেই বাসা বানায় সে। প্রথম দিকে শিশুরা তাকে প্রশ্রয় না দিলেও পরে তাকে আপন করে নেয়। কারণ ফটকা ভালো ক্রিকেট খেলে। সে প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে হারিয়ে দিয়েছে। তাদের দলে নিয়ে নেয় ফটকাকে।

এক দিন একজন মন্ত্রী আসেন সোসাইটিতে খেলার মাঠ উদ্বোধন করতে। তার পিএ দেখেন একদল শিশুর সঙ্গে নোংরা পোশাক পরে ভিদুকে নিয়ে ফটকাও দাঁড়িয়ে আছে। মন্ত্রীর পিএ তাকে সরে যেতে বলেন। কিন্তু শিশুরা তাকে বাধা দেয়। এ নিয়ে অনুষ্ঠানে হট্টগোল শুরু হয়। শিশুরা একাট্টা, ফটকাকে অনুষ্ঠান থেকে বাইরে যেতে দেবে না।

এ ঘটনার পর মন্ত্রী ভাবেন, এটিকে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করতে হবে। তিনি শহরের সব বেওয়ারিশ কুকুর তাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ঘোষণা দেন, কুকুর সোসাইটিতে থাকতে পারবে, তবে সোসাইটির অধিকাংশ লোকের এনওসি লাগবে। মন্ত্রী সোসাইটির সেক্রেটারিকে ডেকে বলেন, ফটকা ও তার কুকুরকে যেন বের করে দেওয়া হয়। আর যেন কোনো এনওসিও না দেওয়া হয়।

ব্যাস! শুরু হয় শিশুদের সঙ্গে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীর লড়াই। শিশুরা নিজেরা নিজেরা মিটিং করে। তারা ভাবে, কীভাবে বিষয়টিতে সবার নজরে আনা যায়। সোসাইটিতে আসা নতুন এক মেয়ে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। যার ডাক নাম দেওয়া হয় টুথপেস্ট। সেও তাদের হেল্প করে। এরপর তারা আন্ডারওয়্যার পরে রাস্তায় নেমে জনসমর্থন জোগাড় করার সিদ্ধান্ত নেয়।

চিল্লার পার্টিতে শিশুদের আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবল সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সিনেমাটি শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জিতেছে। আপনার শিশুকে নিয়ে নেটফ্লিক্সে বসে যেতে পারেন আজই। তবে শেষ পর্যন্তই দেখবেন যেন রণবীর কাপুরের নাচ না মিস হয়।

(দেশ রূপান্তর । ০৮ জুলাই ২০২৪)

মন্তব্যসমূহ