ঝগড়ার ভেতরেও জমে থাকা প্রেম—থালাইভান থালাইভি
আমাদের সমাজে এখনো মেয়ে বিয়ে দিয়ে কানপড়া দেন তার মা। শুধু মা-ই নন, তার বাবা কিংবা ভাইও বসে বসে নানান পরামর্শ দেন। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে এটা করবি না, ওটা করবি না— এভাবে চলবি। মেয়েটিকে যেন নতুন জীবনের আগে থেকেই বেঁধে দেওয়া হয় নানা শর্তে।
আবার নতুন বউ ঘরে আসার পর ছেলেকেও থেমে থাকতে দেওয়া হয় না— বন্ধু, আত্মীয়, প্রতিবেশী সবার কাছ থেকে শুরু হয় নানান কানপড়া কথা। আর এখান থেকেই শুরু হয় সংসারের অশান্তি, ভুল বোঝাবুঝি আর অবিরাম ঝগড়া।
আমাদের সমাজের চেনা এই বাস্তবই যেন ফুটে উঠেছে বিজয় সেতুপতি ও নিত্যা মেননের নতুন সিনেমা থালাইভান থালাইভি-তে। পুরো সিনেমার কাহিনিই দাঁড়িয়ে আছে এই অশান্ত সংসারকে কেন্দ্র করে।
বিজয় সেতুপতি আর নিত্যা মেননের ঝগড়া কখনো এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে দর্শকের কানে সত্যিই ঝালাপালা হয়ে যায়। এখানে শুধু ঝগড়া নয়, আছে মান-অভিমান, মিথ্যা অভিযোগ, গ্রাম্য রাজনীতির টানাপড়েন, স্থানীয় দাদাগিরি, প্রেম-ভালোবাসার টানটান আবেগ—সব মিলিয়ে সিনেমাকে করেছে জীবন্ত।
নিত্যা মেনন তার চরিত্রে স্বাভাবিক অভিনয় করেছেন। একদিকে মিষ্টি ভালোবাসা, অন্যদিকে ক্ষোভ-অভিমান— দুটো দিকই তিনি নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আর বিজয় সেতুপতি তো আছেই—তার অভিনয়ে থাকে একধরনের স্বতঃস্ফূর্ততা, যা দর্শককে চেয়ারে বসিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট। অ্যাকশন দৃশ্যগুলো যেমন প্রাণবন্ত, তেমনি কমেডির অংশও যথেষ্ট উপভোগ্য। মাঝেমধ্যে পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে আপনি ভাববেন— এবার হয়তো ভাঙন আর ঠেকানো যাবে না। ঠিক তখনই একটুখানি আবেগ বা ভালোবাসার টান সিনেমাকে নতুন মোড় দেয়।
সবশেষে বলা যায়, থালাইভান থালাইভি শুধু একটি রোমান্টিক-অ্যাকশন কমেডি নয়, বরং সংসার নামক যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
যেখানে ভালোবাসা যেমন আছে, তেমনি আছে অভিমান, মিথ্যা অভিযোগ আর চারপাশের মানুষের কানপড়া কথার বিষাক্ত ছায়া। ছবিটি দেখলে মনে হবে, আমাদের আশেপাশের সংসারগুলোও প্রায় এমনই—যেখানে দু’জন মানুষ ভালোবাসায় বাঁধা পড়লেও বাইরের চাপ, পারিবারিক কূটনীতি আর ভুল বোঝাবুঝি তাদের সম্পর্ককে টালমাটাল করে তোলে।
যাদের সংসার, ঝগড়া আর ভালোবাসার টানাপড়েনের গল্প দেখতে ভালো লাগে, তাদের জন্য এই সিনেমা নিঃসন্দেহে উপভোগ্য হবে। আর যারা বিয়ে ও সম্পর্ককে শুধু স্বপ্নের মতো কল্পনা করেন, তারাও এখানে বাস্তবতার সঙ্গে সিনেমার মিল খুঁজে পাবেন। তাই হাসি, কান্না, রাগ, অভিমান আর মিষ্টি ভালোবাসার সমন্বয়ে ভরপুর থালাইভান থালাইভি নিঃসন্দেহে সময়ের দাবি পূরণ করেছে।
(কালের কণ্ঠ । ২৩ আগস্ট ২০২৫)
মন্তব্যসমূহ