টাকার লোভে হারিয়ে যাচ্ছে মানবিক মুখ


বিশ্বাস, ভালোবাসা আর আত্মীয়তার বন্ধন—এই তিনটিই মানুষকে মানুষ করে তোলে। কিন্তু যখন অর্থের লোভ সেই বন্ধনের মাঝখানে ঢুকে পড়ে, তখন সম্পর্কের উষ্ণতা মুহূর্তেই বরফে পরিণত হয়। ফরিদপুরের সদরপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি যেন সেই নিষ্ঠুর বাস্তবতার এক ভয়াবহ উদাহরণ।

একজন স্বামী নিজের পরিশ্রমের ১১ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন স্ত্রী ও শাশুড়ির হাতে, জমি কেনার আশায়। এমন বিশ্বাস অস্বাভাবিক নয়—স্ত্রী তো জীবনের সঙ্গী, শাশুড়ি নিজের মায়ের মতো। কিন্তু সেই বিশ্বাসই হলো সর্বনাশের কারণ। জমি কেনা তো দূরের কথা, তারা টাকাটাই আত্মসাৎ করলেন।

এখানেই শেষ নয়, লোকটি শ্বশুরবাড়িতে গেলে রাতের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন স্ত্রী। লোকটি ঘুমে আচ্ছন্ন হলে শুরু হয় এক নরকীয় অধ্যায়—স্ত্রী, শাশুড়ি আর দাদিশাশুড়ি মিলে কাস্তে দিয়ে গলা কাটার চেষ্টা! আগেই পাশের ঘরের বারান্দায় খোঁড়া হয়েছিল গর্ত, সেখানে মৃতদেহ লুকিয়ে ফেলার প্রস্তুতি। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি, প্রতিবেশীরা ছুটে এসে উদ্ধার করেন।

এক মুহূর্তের জন্য ভাবুন—একজন মানুষ, যার পাশে ঘুমাচ্ছে জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ, যার হাতে তুলে দিয়েছে নিজের সব সঞ্চয়; সেই মানুষই যদি মৃত্যু ফাঁদ পাতে, তাহলে পৃথিবীতে নিরাপত্তা কোথায় থাকে?

একসময় টাকার লোভ ছিল সীমিত, মানুষ লজ্জা পেত। এখন টাকাই যেন একমাত্র মাপকাঠি—ভালোবাসা, আত্মীয়তা, বিবেক—সব কিছু তুচ্ছ। আমরা এমন এক সময়ের মুখোমুখি, যেখানে মা-মেয়ে মিলে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে পারে, যেখানে স্বামীর জীবনও টাকার কাছে মূল্যহীন হয়ে যায়।

মানুষ দিন দিন আত্মীয়তার বন্ধন ভুলে যাচ্ছে, আর টাকার মোহে হারিয়ে ফেলছে নিজের মানবিক মুখটি। অর্থ কখনোই শত্রু নয়, কিন্তু অর্থলোভ মানুষকে পশুত্বেরও নিচে নামিয়ে দেয়। সমাজে এখন প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষার, পারিবারিক বন্ধনের পুনর্গঠনের, আর সবচেয়ে বড় কথা—মানবিকতার চর্চার।

(যুগান্তর । ০৪ অক্টোবর ২০২৫)

মন্তব্যসমূহ